Rescue Hotline: +880-178 622 8800 director@leedobd.org

সাজেদুল ইসলাম শুভ্র০৯ মে, ২০১৬ ইং

সারাহ, রাফিদ, সালিমা—স্থাপত্যে পড়ার বাইরেও কাজের ব্যস্ততায় গেল তাদের গত কদিন! তাদের সাথে যোগ দিয়েছিল তাসলিমান ও মম। ক্লাস শেষেই দলবেঁধে তারা চলে যেত বসিলায়, জায়গাটায় মোহাম্মাদপুর বেরিবাধ পার হয়ে যেতে হয়। ওখানে নাকি বাচ্চাদের সাথে সময় কাটায় তারা। কারা এরা? ‘লিডো’ নামক এক সংস্থা পথশিশুদেরকে সংগ্রহ করে তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিত্সা, শিক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে। এরমধ্যে তারা ‘লিডো পিস হোম’ নামে একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে। সেই বাচ্চাদের মানসিক ও দৈহিক বিকাশের অংশ হিসেবে লিডো বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে ‘লিডো’ এবং ‘পারা’ সম্মিলিতভাবে ‘গ্রোইং আপ’ নামে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল পথশিশুদের জন্য কম খরচে একটি বিনোদনমূলক শহুরে বাগানের নকশা তৈরি। ‘পারা’ মূলত এই প্রতিযোগিতার আয়োজক।

এতে যথারীতি চারটি দল—মৃত্তিকা (ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়), আমরা (ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়), ঝি ঝি পোকা (বুয়েট) এবং অংকুর (ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়) অংশগ্রহণ করে। মূলত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যকলা বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা এতে অংশ নেয়। তাদের সাথে প্রথম পরিচয় হয় গত ২ জানুয়ারি। মুহাম্মাদপুর, বসিলা গিয়ে খুঁজতে হলো ‘লিডো পিস হোম’। এলাকাটা নতুন তাই সহজে খুঁজে পাওয়া গেল না। গোল গোল ঘুরে অবশেষে পাওয়া গেল ওয়াসপুর গার্ডেন সিটিতে। দোতলা এক টিনের বাড়ি। পৌঁছানোর পর এতগুলো বাচ্চাকে দেখে মন খুশি হয়ে গেল। জিজ্ঞাসা করে জানা গেল যে বাচ্চার সংখ্যা ৪০। কথা হলো লিডোর নির্বাহী পরিচালক ফরহাদের সাথে। জানা গেল পাশের এক কাঠা জমিতে বাচ্চাদের জন্য তার পরিকল্পনার কথা। একটি খেলার বাগান বানাতে হবে। এটা আবার কী? তিনিই বুঝিয়ে বললেন—এতগুলো বাচ্চার জন্য কিছু বিনোদনের ব্যবস্থা এবং এর পাশাপাশি কিছু পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করতে চান তিনি। এ কথা জানালেন মৃত্তিকা দলের সদস্য সারাহ।

ফরহাদ ভাইয়ের কথা শুনে সকলে কাজে লেগে গেল। জমি পর্যবেক্ষণ, বাচ্চাদের সাথে সমায় কাটানো, তাদের সাথে আরও গভীরভাবে মিশে তাদের চাওয়া-পাওয়াকে গুরুত্ব সহকারে দেখা—এভাবে কয়েকটি ওয়ার্কশপ করা হয়। অবশেষে ৩ ফেব্রুয়ারি সকল দল বাচ্চাদের সামনে তাদের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে। পরবর্তীতে বাচ্চাদের মাধ্যমে বিজয়ী দল ঘোষণা করা হলো মৃত্তিকাকে। সারাহ, রাফিদ, সালিমা এই দলেরই সদস্য। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যকলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র-ছাত্রী তারা। এল প্রজেক্ট বাস্তবায়নের পালা। ১০ মার্চ কাজ শুরু হয়। এ পর্যায়ে দলে যোগ দেয় বন্ধু তাসলিমান ও মম। এছাড়া ব্র্যাক বিশবিদ্যালয়ের স্থাপত্যকলা বিভাগের শাহরিয়াজ, নুসরাত, শিশির, তাহরিম, মিয়াদ এবং জয়ন্ত এদের বিশেষ সহযোগিতায় ২২ মার্চে সকল কর্মকাণ্ড শেষ হয় এবং ‘লিডো’-এর হাতে প্রজেক্ট হস্তান্তর করা হয়। বাচ্চাদের জন্য খেলার জায়গা ও বাগান দুটিকে সম্মিলিতভাবে বাস্তবায়নই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। এত অল্প জায়গায় এতগুলো বাচ্চার জন্য খেলার স্থান এবং পাশাপাশি খাবারের জোগানের ব্যবস্থা করাটা সহজ ছিল না। তাই দেওয়ালগুলো ব্যবহার করে সেখানে পুরোনো বোতল, বস্তা ব্যবহার করে গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়।

বাচ্চাদের নাচ, গান পরিবেশনের জন্য বাঁশ, কাঠের একটি স্টেজ তৈরি করা হয়। এছাড়া দড়ি দিয়ে তৈরি একটি হামক (বিছানাবিশেষ) তৈরি করা হয়। বাচ্চাদের দিয়ে রং করানো হয় জানালা ও দেয়ালগুলোর। এছাড়া দেয়ালের সাথে হেলান দেওয়ানো কিছু মাচা তৈরি করা হয় যেন তাতে লতানো গাছ বেয়ে উঠতে পারে। এ কাজে সকল ফেলে দেওয়া বস্তু ব্যবহার করা হয়েছে এবং সকল কাজ বাচ্চাদের সহযোগিতায় করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যেন বাচ্চারা নিজেদের বাগান নিজেরা দেখাশোনা করতে পারে সেদিকে জোর দেওয়া হয়েছে।

স্থাপত্যশালা ‘পারা’-এর নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আরেফিন, ফারাসা, নিবিড়, প্রিন্স, রুহুলসহ আরও অনেকে। তাদের সহযোগিতা ও চেষ্টা প্রজেক্ট বাস্তবায়নে অসীম ভূমিকা রেখেছে। মৃত্তিকার সাথে কথা বলে জানা গেল, বাচ্চাদের জন্য কাজ করতে পেরে তারা খুব আনন্দিত। বাচ্চারাও তাদের কাজে খুশি। ভবিষ্যতে তারা এমনভাবেই কাজ করে যেতে চায়।

Please subscribe to the LEEDO newsletter to stay in touch!